সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আপনি কি একাদশ শ্রেণির ছাত্র? সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১। নিপা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বিভিন্ন কারণে প্রায়ই সে বিষণ্ণ থাকে। স্কুলে যেতে তার ভালো লাগে না। পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে তার। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কাকে বলে?
খ. সমাজকাঠামো প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের নিপার সমস্যাটির কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সমাজবিজ্ঞানের কোন গবেষণা পদ্ধতিটি উপযুক্ত? আলোচনা কর।
ঘ. সমাজ গবেষণায় উক্ত পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধাসমূহ মূল্যায়ন কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়।
খ। সমাজকাঠামো বলতে সমাজস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ককে বোঝায়। সমাজ কী কী উপাদান দ্বারা কীভাবে গঠিত হয় সেটাই সমাজকাঠামোর মূল বিষয়। ব্যক্তিকে নিয়েই মানবসমাজ গঠিত। অতএব সমাজকাঠামো বলতে, আন্তঃব্যক্তি সম্পর্ক বা ব্যাক্তি কর্তৃক গঠিত শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যকার সামাজিক সম্পর্ককে বোঝায়। এ সম্পর্ক প্রতিফলিত হয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যদিয়ে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
গ। নিপার সমস্যাটির কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সমাজবিজ্ঞানের ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিটি উপযুক্ত। সমাজ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ঘটনা অনুধ্যান। সাধারণত একাধিক প্রপঞ্চ বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে বলা হয় ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি। কোনো একটি বিশেষ পরিস্থিতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধ্যয়নে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত নিপা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
বিভিন্ন কারণে প্রায়ই সে বিষণ্ন থাকে। স্কুলে যেতে তার ভালো লাগে না। পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না। জীবনের প্রতি তার বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে। নিপার এ সমস্যার কারণ উদঘাটনে ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিটি উপযুক্ত। এর মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণের অস্বাভাবিকতার কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অনুরূপভাবে নিপার এ ধরনের আচরণের কারণ ঘটনা অনুধ্যানের মাধ্যমে খুঁজে বের করে এর সমাধান দেয়া সম্ভব। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির মাধ্যমে নিপার সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব।
ঘ। সমাজ গবেষণায় উক্ত পদ্ধতি তথা ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিটির যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধা। ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে গবেষক যেকোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারেন, এজন্য তাকে কোনো ধরাবাঁধা নিয়মে আবদ্ধ থাকতে হয় না। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
গবেষক বিভিন্ন কেসকে বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন এবং পর্যালোচনা করে বৈচিত্র্যপূর্ণ সাধারণীকরণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেষ্ট হয়ে থাকেন। ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে গবেষণার বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়েও অধ্যয়ন করা যায়। যার ফলে কোনো সমস্যাকে সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। সামাজিক গবেষণা কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে গবেষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কাজ হলো গবেষণা ব্যয়, সময়, জনশক্তি প্রভৃতির দিকে খেয়াল রাখা। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
এ সকল দিক বিবেচনায় ঘটনা অনুধ্যান হচ্ছে অধিকতর আদর্শ, উত্তম ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে গবেষকের ওপর ধরাবাঁধা কোনো নিয়মের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গবেষকের পক্ষপাতের ছাপ পড়ে থাকে। ঘটনা অনুধ্যানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যসমূহ সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কারণ তথ্য সরবরাহকারী অনেক সময় গবেষকের ইচ্ছা ও আগ্রহকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের খেয়াল-খুশিমতো উত্তর প্রদান করে থাকে। ফলে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে তথ্যের পরিমাণগত মাত্রা যাচাইয়ের অভাব থাকে। কারণ এতে এতো বেশি তথ্যের সমাবেশ থাকে যা সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না। পরিশেষে বলা যায়, ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির বেশ কিছু অসুবিধা থাকলেও সমাজ গবেষণায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
প্রশ্ন ২। শফিক পড়াশুনা শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছে। এখানে তাকে নিম্নোক্ত কাজসমূহ ধারাবাহিকভাবে করতে হয়।
সমস্যা নির্বাচন → অনুকল্প গঠন → তথ্য সংগ্রহ → তথ্য প্রক্রিয়াকরণ → ফলাফল বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরি।
ক. চলক কী?
খ. কার্যকারণ সম্পর্ক বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে শফিকের কার্যক্রম তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন গবেষণা পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের তথ্যের ভিত্তিতে সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক মর্যাদা বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। পরিবর্তনশীল রাশিকে চলক বলে।
খ। কার্যকারণ হচ্ছে এমন বিষয় যাকে অস্বীকার করে বস্তুজগতের বিবিধ বিবরণ রচনা করা যায়, কিন্তু বিজ্ঞান হয় না। অর্থাৎ কার্যকারণ সূত্র অনুযায়ী কোনো ঘটনা অকারণে ঘটে না। কোনো ঘটনা তখনই ঘটে যখন সেটি ঘটবার উপযোগী শর্ত থাকে। এ কারণে বিজ্ঞানীরা ঘটনাকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেন। এর একটি কারণ এবং অপরটি কার্য। বিজ্ঞান কার্যকারণের ওপর নির্ভরশীল। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
গ। শফিকের কার্যক্রমে আমার পাঠ্যবইয়ের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিষয়বস্তুর বিচার-বিশ্লেষণ ও অনুধাবনের উদ্দেশ্যে সব বিজ্ঞানই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে। আর এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে গিয়ে গবেষককে কতগুলো স্তর অতিক্রম করতে হয়। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে কতগুলো পর্যায় পার হতে হয়। এ স্তরগুলোই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরিচায়ক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলো হলো- সমস্যা নির্বাচন, সমস্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ, অনুসিদ্ধান্ত প্রণয়ন, অনুসিদ্ধান্ত যাচাই এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা।
উদ্দীপকে শফিক পড়াশুনা শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে যেখানে তাকে সমস্যা নির্বাচন, অনুকল্প গঠন, তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, ফলাফল বিশ্লেষণ এবং, প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে হয়। উপরের আলোচনার সাথে এই বিষয়গুলোর তুলনামূলক আলোচনা করলে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, আলোচ্য উদ্দীপকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিভিন্ন স্তর প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বলা যায়, প্রদত্ত ছকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলো প্রতিফলিত হয়েছে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ঘ। উক্ত বিষয়টি অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক মর্যাদা হলো সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা। কিন্তু কোনো বিষয়কে বিজ্ঞান হতে হলে অবশ্যই তাকে কতগুলো স্তর অতিক্রম করতে হবে। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য প্রজ্ঞা, ধীশক্তি, নির্দেশনা বা ধারণার জন্ম নয়, বরং জ্ঞানের উদ্ভাবন। এদিক থেকে বিচার করলে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
সমাজবিজ্ঞানে গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে প্রথমে গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করা হয়। তারপর নির্ধারিত বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস, অনুসিদ্ধান্ত প্রণয়ন এবং যাচাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করে একটি সাধারণ সূত্রে পৌছানোর চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায়। এ অর্থে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানরূপে অভিহিত করা যুক্তিসংগত।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলোর প্রয়োগ সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
প্রশ্ন ৩। সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাকারিয়া সামাজিক গবেষণা কাজে বেশ অভিজ্ঞ। তিনি সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেছেন। ইদানিং তিনি সমাজ সম্পর্কিত গবেষণায় ও অনুশীলনে সংখ্যাতাত্ত্বিক রীতি, সূচক সংখ্যা, পরিসংখ্যান প্রভৃতি উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগৃহীত তথ্যাবলির বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে থাকেন। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ক. প্ৰকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কী নির্দেশ করে?
খ. সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে জাকারিয়া সাহেবের পড়ানোর বিষয়টি বিজ্ঞান হলেও তা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নয়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জাকারিয়া সাহেবের উক্ত বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যসমূহের বিচার বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায়।’— এ বক্তব্যের যথার্থতা আলোচনা করো।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক। প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি একটি প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।
খ। সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপটি হচ্ছে ভবিষ্যদ্বাণী। অর্থাৎ গবেষণার ক্ষেত্রে প্রণীত কল্পনাটি যদি তথ্য দ্বারা সমর্থিত হয় অথবা সাধারণীকরণ সম্ভব হয়, তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে। যেমন— বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে শিক্ষার্থীদের মনোভাব ইতিবাচক সাড়া দান করবে। মূলত এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী যা গবেষণামূলক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। অবশ্য গৃহীত তথ্য বিপরীত সিদ্ধান্তে আসতে পারে। ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে গবেষণা কাজটি শেষ হয়। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
গ। উদ্দীপকে জাকারিয়া সাহেবের বিষয়টি হলো সমাজবিজ্ঞান । আর সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান হলেও তা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নয়। কারণ সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় অবস্তুগত ও বিমূর্ত। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তু বস্তুগত ও বাহ্যিক। সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় সামাজিক মানুষ তথা সামাজিক সম্পর্ক যার গবেষণা কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চালানো সম্ভব নয়। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তুকে পরীক্ষাগারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা সম্ভব। সমাজবিজ্ঞানে একই বিষয় বার বার গবেষণা করলে গবেষণার ফলাফলে তারতম্য ঘটা সম্ভব। অপরপক্ষে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ফলাফল প্রধানত একই হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি বিজ্ঞান হলেও এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নয়।
ঘ। জাকারিয়া সাহেবের সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যসমূহের বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায় । এ বক্তব্যের যথার্থতা নিম্নে আলোচনা করা হলো- বিজ্ঞান হলো বিশেষ জ্ঞান। সাধারণত বিজ্ঞান বলতে নিয়মতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত জ্ঞানকে বোঝায়। এ প্রসঙ্গে চিতাম্বর বলেন, বিজ্ঞানের দুটি উপাদান রয়েছে।
১. যাচাইকৃত জ্ঞান, ২. অধ্যয়নের পদ্ধতি যা বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। এককথায়, বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো প্রজ্ঞা, ধীশক্তি, নির্দেশনা বা ধারণার জন্ম দেওয়া নয় বরং জ্ঞানের উদ্ভাবন। সেদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
এক্ষেত্রে প্রথমে গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত বিষয়ের উপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যসমূহের শ্রেণিবিন্যাস, কল্পনা প্রণয়ন এবং তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় এবং তার ভিত্তিতে একটি সাধারণ সূত্রে পৌছানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
সুতরাং বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যসমূহের বিচার বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায় এ বক্তব্যটি যথার্থ। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
প্রশ্ন ৪। মাস্টার্সের ছাত্র শোয়েব-এর গবেষণার বিষয় ছিল, ‘চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার মানুষের বর্তমান পেশা ও আয়ের সাথে একশ বছর পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনামূলক পর্যালোচনা’। এ গবেষণার জন্যে সে প্রথমে চট্টগ্রামের সমাজকাঠামো সংক্রান্ত গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা এবং সরকারি দলিল-দস্তাবেজ থেকে একশ বছর পূর্বের লোহাগড়া এলাকার মানুষের পেশার ধরন ও আয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তী ধাপে সে বর্তমানের পেশা ও আয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং তুলনা করার মাধ্যমে তার গবেষণাটি শেষ করে।
ক. সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি কোনটি?
খ. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের শোয়েব তার গবেষণায় প্রথম যে পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শোয়েব দ্বিতীয় যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে, সেটি বিশ্লেষণ করে মতামত দাও যে, দুটি পদ্ধতির মধ্যে কোনটি উত্তম?
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক। সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রাচীন পদ্ধতি হলো দার্শনিক পদ্ধতি।
খ। সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে বলা যায় ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সমাজের এক বা একাধিক ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা, অবস্থাকে একক হিসেবে বিবেচনা করে গবেষণা কার্য সম্পাদিত হয়। এ পদ্ধতির প্রধান কৌশলগুলো হলো সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, অনুসূচি, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, পত্রিকার প্রতিবেদন, জীবন ইতিহাস, আত্মজীবনী ইত্যাদি।
গ। শোয়েব তার গবেষণায় প্রথমে ঐতিহাসিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে। ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে অতীত সমাজের ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সমাজের পটভূমি, প্রকৃতি এবং ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান অনুসন্ধান। ঐতিহাসিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে গবেষককে প্রকাশিত রচনাবলির সাহায্য নিতে হয়।
এক্ষেত্রে তিনি সমাজ গবেষণার বিভিন্ন প্রকাশিত গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, গবেষণা রিপোর্ট, সরকারি দলিল-দস্তাবেজ, ঐতহাসিক গ্রন্থ বা রিপোর্ট ইত্যাদির সাহায্য নেন। বস্তুত, ঐতিহাসিক পদ্ধতিতেই সমাজ বিশ্লেষণ করতে গেলে গবেষককে মাধ্যমিক ডাটা বা Secondary Source এর ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ঘ। উদ্দীপকের শোয়েব তার গবেষণাটির মধ্যে প্রথমে সে গবেষণা এলাকার অর্থাৎ চট্টগ্রামের সমাজকাঠামো সংক্রান্ত গ্রন্থ, পত্র- পত্রিকা, সরকারি দলিল-দস্তাবেজ প্রভৃতি মাধ্যম থেকে একশ বছর পূর্বের এ এলাকার মানুষের পেশার ধরন ও আয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। যা ঐতিহাসিক পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায়, শোয়েব গবেষণার প্রথম পর্যায়ে ঐতিহাসিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। ঘ উদ্দীপকে শোয়েব তার গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে লোহাগড়া উপজেলার মানুষের বর্তমান পেশা ও আয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং পূর্বের প্রাপ্ত তথ্যের সাথে তুলনা করে। সুতরাং বলা যায় শোয়েব দ্বিতীয় ধাপে তুলনামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল।
তুলনামূলক পদ্ধতিতে বিভিন্ন সমাজের মধ্যে তুলনামূলক পরীক্ষা চালানো হয়। একটি সমাজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান তথা গোটা সমাজ অন্য সমাজ থেকে কতটা ভিন্নধর্মী বা কতটা সমধর্মী সে সম্পর্কে গবেষণা করতে হলে তুলনামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তুলনামূলক পদ্ধতির একটি বিশেষ গুরুত্ব হচ্ছে এই যে, পদ্ধতিটি বিভিন্ন সমাজের মধ্যে সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য বুঝতে সাহায্য করে। অধিকন্তু সমাজভেদে মানুষের সামাজিক আচরণের মধ্যে কোন ধরনের তারতম্য সৃষ্টি হয় তা এই পদ্ধতির মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়। তুলনামূলক পদ্ধতিতে একই যুগের বিভিন্ন সমাজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যেমন সম্ভব তেমনি একই সমাজের অতীত এবং বর্তমানের মধ্যেও একটি তুলনামূলক গবেষণা সম্ভব। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
অন্যদিকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ঐতিহাসিক পদ্ধতির গুরুত্ব অনেক। আধুনিক বাংলাদেশের সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, বর্তমান বাংলাদেশের সমাজকাঠামো বিগত সমাজের গর্ভেই অঙ্কুরিত হয়েছিল। তাছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্পর্কিত পাঠ ও গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি বেশ সহায়ক। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজ গবেষণায় তুলনামূলক পদ্ধতির চেয়ে ঐতিহাসিক পদ্ধতি উত্তম।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।
lqq9fk