৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে ৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল
প্রশ্ন ১। মা অর্নবের যত্নের ব্যাপারে খুব সচেতন থাকেন। ইদানিং তিনি লক্ষ করছেন অর্নবের পেটটা ফুলে যাচ্ছে। খাবার খেতে দিলে খেতে চাচ্ছে না। দিনদিন তার ওজন কমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তার মা তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার তার লক্ষণ দেখে ব্যবস্থাপত্র দিলেন এবং মলমূত্র ত্যাগের ব্যাপারে সচেতনতার পরামর্শ দিলেন। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
ক. শিশুদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ডিগ্রী ফারেনহাইট?
খ. জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেও আমরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি না কেন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. লক্ষণ অনুযায়ী অর্নব কোন রোগে আক্রান্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ। অর্নবের উক্ত রোগের জন্য ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শটি মূল্যায়ন করো।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। শিশুদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৯° ফারেনহাইট।
খ। আমাদের চারপাশে নানা ধরনের জীবাণু বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেও আমরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি না। কারণ জীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের শরীরে নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
গ। শরীরের লক্ষণ অনুযায়ী অর্ণব গোল কৃমি দ্বারা আক্রান্ত। সাধারণত কাঁচা শাকসবজি ও ফলের মাধ্যমে গোল কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করে এবং পরে অন্ত্রের মধ্যে এ কৃমির উৎপত্তি হয়। কৃমির আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পেট ফুলে যায়।
ক্ষুধামন্দা ভাব দেখা দেয়, ওজন কমে যায়, অপুষ্টি এবং রক্তশূন্যতাও দেখা যায়। কৃমি শিশুর মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। কৃমির কারণে বদহজম ও দৈহিক দুর্বলতাও দেখা যায়। অর্নবের পেটটা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তার ক্ষুধামন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। তার এসকল লক্ষণই নির্দেশ করে সে গোলকৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
ঘ। অর্নবের ডাক্তার মলমূত্র ত্যাগের ব্যাপারে তার মাকে সচেতন থাকতে বলেছেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবেই কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মলমূত্র ত্যাগের পর যদি হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হয় তবে কৃমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাছাড়া ঠাণ্ডা ও বাসি খাবার পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কৃমি হতে পারে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
কৃমি যেন না হতে পারে সেজন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। অর্নবের শারীরিক অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে সে কৃমি দ্বারা আক্রান্ত। অর্নবের মা তাকে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার তাকে ব্যবস্থাপত্র দেন এবং সাথে সাথে পরামর্শ দেন যাতে অনবকে মলমূত্র ত্যাগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে। সুতরাং বলা যায়, অর্নবের কৃমি রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শটি যথার্থ।
প্রশ্ন ২। দুই বছরের আদিব ঘন ঘন মলত্যাগ করছে। তার মা যা খাওয়াচ্ছে তাই বমি করে দিচ্ছে। তার চোখগুলো বসে যাচ্ছে এবং মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। এই রূপ অবস্থায় আদিবের মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্রসহ খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আদিবের মা ডাক্তারের পরামর্শ পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
ক. ডায়রিয়ার রোগীকে স্যালাইন খাওয়ানোর উদ্দেশ্য কী?
খ. ডায়রিয়া হলে স্যালাইন কেন খাওয়াতে হয় ব্যাখ্যা করো।
গ. উক্ত রোগ নিরাময়ে আদিবের মা কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “অসচেতনতাই আদিবের অসুস্থতার জন্য দায়ী”- উক্তিটির সাথে তুমি কি একমত? সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ডায়রিয়ার রোগীকে স্যালাইন খাওয়ানোর মূল উদ্দেশ্য পানি স্বল্পতা, রোধ করা।
খ। ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়। এর ফলে শরীর থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। যার সাথে পটাশিয়াম বাইকার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং গ্লুকোজ নামক উপাদান বের হয়ে যায়। স্যালাইনের মাধ্যমে সে অভাব পূরণ হয়। তাই ডায়রিয়া হলে রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হয়।
গ। আদিব ঘন ঘন মলত্যাগ করছে। সে বমি করছে, তার চোখ বসে যাচ্ছে, মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। লক্ষণগুলো দেখে বোঝা যায় যে, আদিবের ডায়রিয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদিবের মাকে কতগুলো নিতে হবে— আদিব যতবার মলত্যাগ করবে ততবার বেশি পরিমাণে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
তাকে পদক্ষেপ স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। তাকে তরল খাবার, যেমন-ফলের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। পাতলা মলত্যাগ বেশি হলে, মুখে স্যালাইন খেতে না পারলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ঘ। “অসচেতনতাই আদিবের অসুস্থতার জন্য দায়ী।” উক্তিটির সাথে আমি একমত। ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। সাধারণত অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত খাদ্য থেকে ডায়রিয়া রোগ হয়। তাই ডায়রিয়া প্রতিরোধে সব সময় ফুটানো বিশুদ্ধ পানি বা টিউবওয়েলের পানি পান করতে হয়। দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে পান করতে হয়। খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখতে হয় যেন মশা-মাছি বসতে না পারে। খাবার গরম করে খেতে এবং প্যা-বাসি খাবার বর্জন করতে হয়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
থালা-বাসন বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে হয়। মলমূত্র ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধুতে হয়। বাজার থেকে আনা ফলমূল বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হয়। উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে বলা যায়, অপরিষ্কার পরিবেশ আদিবের অসুস্থতার জন্য দায়ী। আদিবের মা যদি সচেতন হতেন তবে আদিবের ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো।
প্রশ্ন ৩। রিক্সাচালক জসিমের বসবাসকৃত গৃহটি অন্ধকার ও স্যাঁতসেঁতে। তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আসমা জ্বরের সাথে কানের দুইপাশের ব্যথায় মুখ খুলতে পারে না। অপরদিকে জসিমের ছোট মেয়ে জরিনার প্রায়ই রাতে জ্বর আসে। জরিনার ক্রমাগত কাশির কারণে বাবা-মা রাতে ঘুমাতে পারে না। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
ক. ইনফ্লুয়েঞ্জা কী?
খ. ডায়রিয়া কেন হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. আসমা কোন রোগে আক্রান্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জরিনার রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য বাবা-মার পদক্ষেপসমূহ বিশ্লেষণ করো।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসজনিত ও বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ ।
খ। ডায়রিয়া প্রধানত পানিবাহিত রোগ। অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত খাদ্য থেকে ডায়রিয়া হয়। এ রোগে খাদ্যদ্রব্য বেশিক্ষণ অন্তে না থাকায় এগুলোর পরিপাক ও শোষণ সম্পূর্ণ হয় না। ফলে খাদ্য উপাদানগুলো দ্রুত পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। প্রচুর অশোষিত পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মল তরল হয়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
গ। আসমা মাম্পস রোগে আক্রান্ত। মাম্পস ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এই রোগ সব বয়সের মানুষের হয়। তবে ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের এই রোগ বেশি হয়। বিশেষত শীতকালে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। রোগটি সংক্রমিত হওয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। রিক্সাচালক জসিমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আসমা জ্বরের সাথে কানের দুইপাশে ব্যথায় মুখ খুলতে পারে না। মাম্পস রোগের শুরুতে জ্বর হয়।
তারপর ঘাড়ের পাশে কানের নিচে একপাশে বা উভয় পাশে ফুলে যায়; ব্যথা হয় এবং মুখ খুলতে অসুবিধা হয়। তাই এই সময় আসমাকে তরল খাবার যেমন- দুধ, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি দিতে হবে। তাকে লবণ ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
ঘ। জরিনা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। যক্ষ্মা এক প্রকার মারাত্মক সংক্রামক রোগ। মাইক্রো-ব্যাকটেরিয়াল টিউবারকুলোসিস নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারাই এই রোগ ছড়ায়। জসিমের ছোট মেয়ে জরিনার প্রায়ই রাতে জ্বর আসে। জরিনার ক্রমাগত কাশির কারণে বাবা-মা রাতে ঘুমাতে পারে না। যক্ষ্মার প্রথমে অল্প অল্প জ্বর ও কাশি হয়।
ক্ষুধা কমে যায়, শিশু ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ওজন কমে যায়। জরিনার রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য তার বাবা-মাকে রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে এবং নিয়মিত ঔষধ খাওয়াতে হবে। জরিনাকে পৃথক ঘরে পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাকে আলো- বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখতে হবে। তার কফ, থুথু যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। তার ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও থালা-বাটি আলাদা করে রাখতে হবে ও পরিষ্কার করতে হবে। সুতরাং, জরিনার মা-বাবাকে উপরিউক্ত পদক্ষেগুলো গ্রহণ করতে হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়)
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।