৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় সৃজনশীল: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে ৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় সৃজনশীল
প্রশ্ন ১। রনি ও জনি দুই ভাই পুকুর পাড়ে খেলছিল। হঠাৎ রনি পুকুরে পরে গেলে জনির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাকে তুলে তার শ্বাসক্রিয়া প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে চালু করে। এ সংবাদ শুনে তাদের মা অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে জনির বোন রাফিয়া মাকে চিৎ করে পা উঁচু করে শুইয়ে দেয় এবং চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
ক. সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায় কখন?
খ. চোখে কিছু পড়লে কী করা উচিত?
গ. রনিকে বাঁচাতে গৃহীত ব্যবস্থাটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মাকে সুস্থ করতে রাফিয়ার পদক্ষেপটি মূল্যায়ন করো।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়।
খ। চোখে কিছু পড়লে কখনো চোখ ঘষতে নেই। ঘষা লাগলে চোখ জ্বালা করবে। চোখের অনেক ক্ষতিও হতে পারে। তাই চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এতে চোখে ময়লা থাকলে তা বের হয়ে আরাম বোধ হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
গ। পুকুর পাড়ে খেলতে গিয়ে রনি পুকুরে পরে যায়। জনির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন আসে। রনিকে পানি থেকে তুলে এনে তারা, শ্বাসক্রিয়া ও নাড়ির স্পন্দন লক্ষ করে। নিঃশ্বাস পড়ছে না বলে তারা তাকে মাথা নিচু ও কাত করে শুইয়ে দেয়। মুখের চোয়াল দুই পাশ থেকে শক্ত করে ধরে মুখ হাঁ করে শ্বাসনালী খুলে দেবার জন্য দুটি আঙুলে পরিষ্কার কাপড় পেঁচিয়ে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় তারপর পেট ও বুকে চাপ দেয়।
এতে ভিতরের পানি গলা দিয়ে বের হয়। মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসক্রিয়া চালু করে। এরপর দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
ঘ। রাফিয়ার নেওয়া পদক্ষেপটি তার মায়ের জীবন বাঁচাতে সহায়ক ছিল। যে কোনো দুর্ঘটনায় রোগীকে সাময়িকভাবে আরাম দেওয়ার জন্য, জীবন রক্ষার জন্য ও পরবর্তীতে কোনো মারাত্মক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। মা যখন অজ্ঞান হয়ে যান, রাফিয়া সাথে সাথে মাকে চিৎ করে পা উঁচু করে শুইয়ে দেয়। চোখে, মুখে পানির ঝাপটা দেয়।
এভাবে রাফিয়া তার মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। রাফিয়া যদি অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে মাকে চিৎ করে শুইয়ে পা উঁচু করে না দিতো তাহলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতো। রাফিয়ার পদক্ষেপটি তার মায়ের জীবন রক্ষায় সহায়ক ছিল। তাই বলা যায়, যেকোনো দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা রোগীকে মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন ২। রাহী বন্ধুদের নিয়ে আম পাড়তে গিয়ে মৌমাছির কামড় খেয়ে চিৎকার শুরু করে। চিৎকার শুনে তার মা ছুটে আসতে গিয়ে বাঁশের শাল তার পায়ে ঢুকে যায়। রাহীর দাদি রাহীর মৌমাছির কামড়ের জায়গায় পেঁয়াজের রস ঘষে দেন এবং রাহীর মায়ের পায়ের কাঁটা সুচ দিয়ে বের করে আনেন।” (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
ক. অজ্ঞান রোগীর জ্ঞান ফিরলে কী খাওয়াতে হবে?
খ. গলায় কিছু আটকে গেলে কী করণীয় ব্যাখ্যা করো।
গ. রাহীর দাদি কোন পদ্ধতিতে রাহী ও তার মাকে সাময়িক আরাম দেন তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রাহীর দাদির পদক্ষেপটি মূল্যায়ন করো।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। অজ্ঞান রোগীর জ্ঞান ফিরলে তাকে গরম দুধ বা শরবত খাওয়াতে হবে।
খ। গলায় মাছের কাঁটা, হাড়ের টুকরা ইত্যাদি আটকে গেলে শুকনা ভাত না চিবিয়ে মুঠা করে খেতে হবে। আবার পাকা কলা খেলেও কাঁটা বা হাড় নেমে যায়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
গ। রাহীর দাদি রাহী ও তার মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে সাময়িক আরাম প্রদানের ব্যবস্থাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। রাহী আম পাড়তে গেলে তাকে মৌমাছি কামড়ালে তার দাদি পেঁয়াজের রস ঘষে দেন। এতে সে সাময়িকভাবে আরাম পায়। আবার রাহীর চিৎকার শুনে রাহীর মা ছুটে আসতে গেলে বাঁশের শাল তার পায়ে ঢুকে যায়।
এতে রাহীর দাদি সুচ পুড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করে শালযুক্ত স্থানের চামড়া সুচ দিয়ে সরিয়ে বাঁশের শাল বের করে আনেন। এরপর স্থানটি স্যাভলন দিয়ে মুছে দেন। রাহী ও তার মা দুজনেই ছোট দুর্ঘটনার শিকার হন। রাহীর দাদি তার জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা রাহী ও তার মাকে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সাময়িক আরাম দেন। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
ঘ। রাহির দাদির নেয়া প্রাথমিক চিকিৎসার পদক্ষেপটি অত্যন্ত কার্যকরী বলে আমি মনে করি। অসাবধানতাবশত বাড়িতে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে মানুষ নানা রকম আঘাত প্রাপ্ত হয়। এ আঘাত ছোট বা বড় যাই হোক তা যেন না বাড়ে এবং অবনতির দিকে না যায় সেজন্য সাময়িকভাবে আরাম দেওয়া জরুরি। এ কাজটি প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব। প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা আহত ব্যক্তির আরামের ব্যবস্থা করা যায়।
রাহীর দাদি প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে রাহী ও তার মাকে সাময়িকভাবে আরাম প্রদান করেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয় না কিন্তু রোগী যাতে বিপদমুক্ত থাকে সে ব্যবস্থা করা হয়। রাহীর দাদি সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছিলেন। রাহীকে মৌমাছি কামড়ালে তিনি আক্রান্ত স্থানে পেঁয়াজের রস ঘষে দেন। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
আবার রাহীর মায়ের পায়ের শাল সুচ দিয়ে বের করে দেন। এভাবে তিনি তাদের আরামের ব্যবস্থা করেন। অতএব রাহীর দাদির মতো প্রত্যেকেরই উচিত যেকোনো দুর্ঘটনায় বিচলিত না হয়ে রোগীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা। সুতরাং বলা যায়, রাহীর দাদির পদক্ষেপটি যথার্থ ছিল।
প্রশ্ন ৩। গ্রীষ্মকালের এক দুপুরে মায়া স্কুল থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছিল। বাসার সামনে আসার পর তার ছোট ভাই মুরাদের চিৎকার শুনতে পায়। মুরাদ বাগানে খেলতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারের সাথে হাত আটকিয়ে যায়। মায়া কাঠের তক্তা দিয়ে আঘাত করে ভাইকে বৈদ্যুতিক তার থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজে অজ্ঞান হয়ে যায়। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
ক. ফার্স্ট এইড বক্স কাকে বলে?
খ. গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয় কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. মায়া কোন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মুরাদের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তার পরিবারের করণীয় বিশ্লেষণ করো।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি যে বাক্সে রাখা হয় তাকে ফাস্ট এইড বক্স বলে।
খ। গলায় মাছের কাঁটা, হাড়ের টুকরা ইত্যাদি আটকে গেলে শুকনা ভাত মুঠা করে না চিবিয়ে খেতে হবে। আবার পাকা কলা খেলেও কাঁটা বা হাড় নেমে যায়।
গ। মায়া বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার। ভাইয়ের হাত বৈদ্যুতিক তারে আটকিয়ে গেলে তাকে উদ্ধার করার জন্য মায়া কাঠের তক্তা দিয়ে আঘাত করে। এরপর মায়া নিজেই অজ্ঞান হয়ে যায়। সাধারণত অত্যধিক গরম, ক্ষুধা, ভয়, দুর্বলতা, দুঃসংবাদ ইত্যাদি কারণে মস্তিষ্কে রঙের সরবরাহ কমে যায়, ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
মায়া যখন স্কুল থেকে আসে তখন হঠাৎ তার ভাইয়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে ভয় ও আতঙ্কে সে অস্থির হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাড়াতাড়ি তার ভাইকে মুক্ত করে ফেললেও মায়া আতঙ্কগ্রস্ত থাকায় তার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
ঘ। বাগানে খেলার সময় মুরাদ বৈদ্যুতিক তারে হাত দিলে হাত আটকে যায়। অর্থাৎ সে তড়িতাহত হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তার পরিবারের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক তার যেন যত্রতত্র পড়ে না থাকে মুরাদের পরিবারকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
অজ্ঞতা বা অসাবধানতার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকলে সে তারের সংস্পর্শে আসলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মুরাদের পরিবারের এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পূর্ব থেকেই মুরাদকে সচেতন করা উচিত ছিল।
বাগানে খেলতে যাওয়ার সময় রাবারের স্যান্ডেল পরালে মুরাদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতো না। সর্বোপরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে ঘর ও ঘরের বাইরে বৈদ্যুতিক তার ও সংযোগগুলো মাঝে মাঝে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। এতে করে এধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা মুরাদের পরিবারের জন্য সহজতর হবে। (৮ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়)
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।