৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সৃজনশীল: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সৃজনশীল
প্রশ্ন ১। দিতি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। সে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইদানীং পড়তে বসলে তার মাথা ঘোরে এবং দুর্বল লাগে। দিতির বাবা একজন নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারী। তাই চাহিদা অনুযায়ী দিতিকে মাছ-মাংস দিতে পারে না। তার বাবা ডাক্তারের কাছে দিতিকে নিয়ে গেলে তাকে দুধ, ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়াতে বলেন।
ক. মৌলিক খাদ্যশ্রেণি কাকে বলে?
খ. মৌলিক খাদ্যশ্রেণির কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর।
গ. দিতির জন্য সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় মৌলিক খাদ্য শ্রেণির ব্যবহার কীভাবে করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর মৌলিক খাদ্য শ্রেণি থেকে খাদ্য গ্রহণ করলে দিতির সকল পুষ্টি উপাদান গৃহীত হবে? সপক্ষে মতামত দাও।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। খাদ্যের উপাদান এবং দেহে খাদ্যের কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে সব শ্রেণির খাদ্যের সমন্বিত সুষম খাদ্য পরিকল্পনা করার জন্য খাদ্যসমূহকে কতকগুলো মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এদেরকে মৌলিক খাদ্যশ্রেণি বা মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী বলা হয়।
খ। খাদ্য সুষম হতে হলে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি- এ ছয়টি পুষ্টি উপাদানই উপযুক্ত অনুপাতে খাদ্যে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। তাই মৌলিক খাদ্যশ্রেণির মাধ্যমে খাদ্য নির্বাচন করে খাদ্য গ্রহণ করলে সহজেই সুষম হবে। মৌলিক খাদ্যেশ্রেণি থেকে প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন করলে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা সহজ হবে। খাদ্যকে একঘেয়েমিমুক্ত এবং রুচিকর করে পরিবেশন করার জন্য এর ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে সুষম খাদ্য তালিকা তৈরির জন্য মৌলিক খাদ্যশ্রেণির গুরুত্ব রয়েছে।
গ। বিভিন্ন খাদ্য যে পরিমাণে গ্রহণ করলে কোনো ব্যক্তির দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য দেহের প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ডিটামিন, খনিজ পদার্থ ও পানি সরবরাহ করে। মাছ, ডাল, ‘ডাত রুটি, শাকসবজি ও ফল, দুধ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির খাদ্য নিয়েই খাবার সুষম হয়। উদ্দীপকে দিতির জন্য সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় মৌলিক খাদ্যশ্রেণির ব্যবহার হলো-
১. খাবারে ৫টি মৌলিক শ্রেণির খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করে ৬টি পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
২. প্রত্যেক শ্রেণির খাদ্য পরিবেশন পরিমাণ জানা থাকায় খুব সহজেই পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য নির্বাচন করা।
৩. দৈনিক মোট ক্যালরির ৫০% থেকে ৬০% কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যগ্রহণের জন্য শস্য ও শস্যজাতীয় খাদ্য নির্ধারিত পরিবেশন পরিমাণ গ্রহণ এবং ২০ গ্রাম গুড় বা চিনি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা।
৪. দৈনিক মোট ক্যালরির ২০% প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ ও দেহে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য মৌলিক খাদ্যশ্রেণির মাছ, মাংস, ডাল ও বিচি জাতীয় খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় সুষম খাবার গ্রহণ করা।
৫. দৈনিক মোট ক্যালরির ২০% থেকে ৩০% ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
৬. ভিটামিন ও ধাত্ব লবণের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করা। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্যালরি সরবরাহ চাহিদার চেয়ে খাওয়া যাতে কম বা বেশি না হয় সেজন্য এবং অপুষ্টি প্রতিহত করার জন্য সুষম আহার গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ। হ্যাঁ, আমি মনে করি মৌলিক খাদ্য শ্রেণি থেকে খাদ্য গ্রহণ করলে দিতির সকল পুষ্টি উপাদান গৃহীত হবে। আমাদের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আর এ খাদ্য প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সঠিক খাবার গ্রহণ করা উচিত। এজন্যই পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণ খাদ্যকে কয়েকটি মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
১. শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্যশ্রেণি : শক্তি প্রদানকারী সব খাদ্যের মধ্যে শস্য ও শস্যজাতীয় খাদ্য থেকেই আমরা মোট ক্যালরির অর্ধেকের বেশি পেয়ে থাকি। আমাদের প্রতিবেলার খাবারের শস্যজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকায় চাল, গম, আলু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সরবরাহ করে।
২. শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশ্রেণি: উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় শাকসবজি ও ফল এ শ্রেণির খাদ্য। প্রতিদিন তিন বেলার আহারে ৪ থেকে ৬ পরিবেশন শাকসবজি, ফল দেহের পরিপুষ্টির জন্য পরিহার্য।
৩. মাছ, মাংস, ডাল ও বিচি জাতীয় খাদ্যশ্রেণি : এ খাদ্যশ্রেণি থেকে দৈনিক ৬০ থেকে ১২০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যায়। প্রতিদিন প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উভয় শ্রেণি থেকেই প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
৪. দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যশ্রেণি : শিশুদের জন্য এ শ্রেণির খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়েরা দুধই যথেষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক খাদ্যে দুধ অপরিহার্য নয় তবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার খুবই ভালো উৎস। এ জাতীয় খাদ্যে উচ্চমানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও রিবোফ্লাভিনের চাহিদা পূরণ হয়।
৫. তেল ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যশ্রেণি : তেল ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্য খুবই কম পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। কারণ এ খাবারগুলো খুব বেশি পরিমাণে খেলে খুব তাড়াতাড়ি শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। এজন্য রান্নায় যতটা সম্ভব কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করা উচিত এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
সুতরাং বলা যায়, উক্ত মৌলিক শ্রেণি থেকে খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে দিতির সকল পুষ্টি উপাদান গৃহীত হবে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।