৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
৭ম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল
প্রশ্ন ১। প্রমিদের পাশের বাড়ির সম্পাকে সকলে পাগল বলে। সম্পা ভালো করে কথা বলতে ও শুনতে পারে না এবং তার শরীরের বামপাশ অনেকটা দুর্বল। এজন্য সে একা চলাফেরা করতে পারে না। সম্পার মা সম্পার দেখাশুনা করেন। কিন্তু কখনও কখনও সম্পার মা রাগ করে তাকে মারেন। তখন প্রমির খুব কষ্ট হয়। প্রমি তাই মাঝে মাঝে সম্পার সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন।
ক. পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা কত ভাগ প্রতিবন্ধী?
খ. শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলতে কী বোঝায়?
গ. পাঠ্যবইয়ের আলোকে সম্পার প্রতিবন্ধিতার ধরন ‘সম্পর্কে লেখ।
ঘ. সম্পার প্রতি তার পরিবারের দায়িত্বগুলো বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী।
খ। শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয়, যাদের শোনার ক্ষমতায় ঘাটতি থাকে। যার কারণে কথা শুনতে বা কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যেহেতু শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা শব্দ বা কথা শুনতে পারে না, তাই তারা কথা বলতেও শেখে না। তারা কথা বলার পরিবর্তে অঙ্গভঙ্গি দিয়ে বা ইশরায় নিজের চাহিদা প্রকাশ করে।
গ। সম্পা বহুবিধ প্রতিবন্ধী। আমরা জানি, একই সাথে একাধিক প্রতিবন্ধিতা থাকলে তাদেরকে বহুবিধ প্রতিবন্ধী বলা হয়। সম্পা একই সাথে শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সম্পা ভালো করে কথা বলতে ও শুনতে পারে না।
আর আমরা জানি, যাদের শোনার ক্ষমতায় ঘাটতি থাকে এবং যার কারণে কথা শুনতে বা কথা বলতে সমস্যা হয় তাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলে। সুতরাং সম্পা একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাছাড়া সম্পার শরীরের বামপাশ দুর্বল হওয়ায় সে একা চলাফেরা করতে পারে না। এ কারণে সে শারীরিক প্রতিবন্ধীর তালিকায় পড়ে।
কারণ আমরা জানি, যাদের হাত কিংবা পা অসম্পূর্ণ, অবশ, দুর্বল থাকে, দেহের গঠন স্বাভাবিক নয় বা দেহের কোনো অংশ ব্যবহারে অক্ষমতা থাকে, যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা হয়, তারাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সম্পার মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধতা এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। আর একাধিক প্রতিবন্ধিতা থাকার কারণে সে বহুবিধ প্রতিবন্ধীদের অন্তর্গত হয়েছে।
ঘ। যেহেতু সম্পা একজন বহুবিধ প্রতিবন্ধী সেহেতু সম্পার প্রতি তার পরিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কারণ যেকোনো শিশুর মতো প্রতিবন্ধী সম্পার ক্ষেত্রেও উন্নত পারিবারিক পরিবেশ ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য তার পরিবারের সদস্যদের করণীয়গুলো হলো-
১. প্রতিবন্ধী সম্পাকে অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতোই ভালোবাসা দিতে হবে। পরিবারের মধ্যে মা-বাবা, ভাইবোনের কাছে সে ভালোবাসা পেলে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরাও তাকে ভালোবাসবে।
২. সম্পার প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে সে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শিখবে।
৩. সম্পার জন্য বিশেষ যত্ন, চিকিৎসাসেবা ও সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে তার পরিবারকে।
৪. যেকোনো অনুষ্ঠানে পরিবারের সকলের সাথে তাকে বেড়াতে নিতে হবে। যেমন—পিকনিক, বিয়ে, শিশুপার্ক, মেলা ইত্যাদি।
৫. প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় অপুষ্টির শিকার বেশি হয়। এজন্য স্বাভাবিক শিশুর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী সম্পারও সুষম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. পরিবারে বাবা-মায়ের সাথে ভাইবোন বা অন্য সদস্যদেরও সম্পার বিশেষ যত্নে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৭. সম্পার মা কখনও কখনও রাগ হয়ে সম্পাকে মারেন। এটি কখনও করা যাবে না। তাকে বুঝিয়ে শান্ত করতে হবে।
মোটকথা সম্পার জন্য চিকিৎসা, যত্ন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত শ্রম, সময় এবং ধৈর্য পরিবারের সদস্যদের ব্যয় করতে হবে।
প্রশ্ন ২। রীতা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জন্মের পর ভালোই ছিল। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হলে ওর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সে মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। তার পড়ালেখা বন্ধ। দিন দিন সে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।
ক. কাদের বুদ্ধির মাত্রা কম থাকে?
খ. ব্রেইল পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
গ. রীতা স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কী কী উপায় অবলম্বন করতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজে বড়ই অবহেলিত। তুমি একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে কীভাবে সহায়তা দিতে পার তা নিজের ভাষায় লেখ।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধির মাত্রা কম থাকে ।
খ। যারা চোখে আংশিক বা পুরোপুরি দেখতে পায় না তারাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে এদের কাজকর্ম ও চলাফেরায় সমস্যা হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা স্পর্শ দিয়ে বস্তু চেনে, বস্তুর নাম শেখে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির নাম ব্রেইল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে স্পর্শের মাধ্যমে উঁচু ফোঁটা দিয়ে বর্ণ ও সংখ্যা তৈরি করে লেখাপড়া করানো হয় ।
গ। উদ্দীপকের রিতা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সমাজ ও পরিবারের সবার সহযোগিতায় রিতাকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা সম্ভব। তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য তাকে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সাহায্য করা যায়। রিতাকে শব্দ ও স্পর্শ দিয়ে সব কিছু বোঝাতে হবে।
নিকটস্থ পরামর্শ কেন্দ্রের সাহায্যে রিতাকে শোনার, অনুভব করার, কোনো কিছুর গন্ধ নেওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। পরিবারের লোকজনের সাথে প্রচুর কথা বলতে হবে, গান শুনতে হবে। রিতাকে স্পর্শ করে চলাফেরা করাতে শিখাতে হবে। রিতাকে খেলার মাঠে নিয়ে যেতে হবে। তাকে নিজের কাজ নিজেরই করার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
রিতাকে বিশেষ স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে। সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে মেশার জন্য উদ্দীপনা দিতে হবে। সমাজ ও পরিবারের সবার ভালোবাসা এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই রিতার জগৎ সহজ ও সুন্দর করা সম্ভব। এভাবেই রিতা তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
ঘ। প্রতিবন্ধী শিশুরা আসলেই সমাজে বড় অবহেলিত। একজন প্রতিবন্ধীকে অবশ্যই সহায়তার মাধ্যমে আত্মনির্ভর করা সম্ভব। নিম্নলিখিত উপায়ে আমি একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে সহায়তা করতে পারি। যেমন-
১. দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলে তাকে ব্রেইল পদ্ধতি শিখাতে হবে।
২. যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুটিকে সঙ্গ দেওয়া, দেখাশুনার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে।
৩. প্রতিবন্ধীদের ধরন অনুযায়ী তাদের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে।
৪. এলাকায় দরিদ্র প্রতিবন্ধীকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হবে।
৫. অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশার জন্য সহযোগিতা করতে হবে।
৬. তাদের মনের ভয় দূর করতে হবে।
৭. প্রতিবন্ধী শিশুদের বৃত্তিমূলক কাজে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
উল্লিখিত উপায়ে একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে সহায়তা প্রদান করা যায়।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।