সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৪র্থঅধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আপনি কি একাদশ শ্রেণির ছাত্র? সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১। ফরিদ মিয়ার আর্থিক অবস্থা পূর্বে ভালো ছিল না। তিনি জমি বিক্রি করে তার দুই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠালেন। এখন তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক। সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক. লোকরীতি কী? খ. ‘সামাজিক স্তরবিন্যাস সর্বজনীন’— ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ফরিদ মিয়ার সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন কোন ধরনের সামাজিক গতিশীলতাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উক্ত সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে”— আলোচনা কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। লোকরীতি হচ্ছে সমাজের আদর্শ বা মানসম্মত আচরণ যা সমাজের সদস্যদের জন্য অবশ্য পালনীয়।
খ। অমার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শ্রেণিহীন সমাজ কল্পনামাত্র। অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো চিরন্তন ও সর্বজনীন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন কোনো সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় না, যা পরিপূর্ণভাবে সাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সমাজজীবনের সূচনা থেকেই সামাজিক স্তরবিন্যাসের উদ্ভব ঘটেছে এবং কখনো অবলুপ্ত হয়নি। স্তরবিন্যাসকে বাস্তবে কখনো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কালের বিবর্তনের ধারায় সামাজিক স্তরবিন্যাসের আকৃতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু স্তরবিন্যাস কখনো বিলুপ্ত হয়নি।
গ। উদ্দীপকের ফরিদ মিয়ার সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতাকে নির্দেশ করে। কর্মক্ষেত্র পেশা প্রভৃতি পরিবর্তনের ফলে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদায় হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, তবে তাকে উল্লম্ব গতিশীলতা বলে। উল্লম্ব গতিশীলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তি একটি সামাজিক স্তর থেকে অন্য একটি সামাজিক স্তরে উন্নীত হয়।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। উল্লম্ব গতিশীলতা আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা— ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা ও অধোমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা। সামাজিক গতিশীলতার ফলে যদি ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার উন্নতি ঘটে, তবে তাকে ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা বলে। আর সামাজিক গতিশীলতার ফলে যদি সামাজিক মর্যাদার অবনতি ঘটে, তখন তাকে অধোমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা বলে ।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, ফরিদ মিয়ার আর্থিক অবস্থা পূর্বে ভালো ছিল না। তিনি জমি বিক্রি করে তার দুই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠালেন। এখন তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক। সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ফরিদ মিয়ার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা ঘটেছে।
ঘ। উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশিত সামাজিক প্রত্যয় হচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা। এ ধরনের গতিশীলতার ক্ষেত্রে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব গতিশীলতা দ্বারা সমাজের ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ব্যাক্তির সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আসে। এর ফলে তার আর্থিক অবস্থাও ভালো হয়।
আর এসব গতিশীলতার পেছনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। কারণ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা গ্রহণ শেষে ব্যক্তি সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হয়। ফলে তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সম্মানজনক পেশায় কর্মরত থাকার কারণে ব্যক্তির আর্থিক উন্নতিও সাধিত হয়। এই অর্থ-সম্পত্তিও সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করে। শিক্ষার কারণে মানুষ সমাজে সম্মান লাভ করে।
সমাজের সাধারণ ব্যক্তিরা সঠিক পরামর্শের জন্য শিক্ষিত ব্যক্তির কাছে যায়, যা শিক্ষিত ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন থাকার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে কাজ করেন। এ বিষয়টিও সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে। আমরা অনেক সময় দেখি, দরিদ্র বাবার সন্তান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের সামাজিক মর্যাদায় পরিবর্তন ঘটানোর পাশাপাশি বাবার মর্যাদারও পরিবর্তন ঘটায়।
অর্থাৎ শিক্ষা মানুষের সামাজিক মর্যাদার আমূল পরিবর্তন ঘটায়। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্ব সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
🔰🔰 আরও দেখুন: এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান ২য় অধ্যায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
🔰🔰 আরও দেখুন: এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান ২য় অধ্যায় অনুধাবণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ২। রূপপুর গ্রামে অনেক পেশাজীবী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় পাশাপাশি বসবাস করে দীর্ঘদিন থেকে। এই সম্প্রদায়গুলো গড়ে উঠেছে সহজাত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এবং সকলে সমজাতীয় জীবনযাপন করে থাকে। ক. লোকরীতি কী? খ. প্রাথমিক দল ও সামাজিক দল বলতে কী বুঝায়? গ. উদ্দীপকে সামাজিক প্রত্যয়টির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। ঘ. উদ্দীপকে প্রত্যয়টির সাথে সমাজের পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। লোকরীতি হচ্ছে সেইসব আদর্শ ও মানসম্পন্ন আচরণ যা সমাজের মানুষের জন্য অবশ্য পালনীয়।
খ। দল বলতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সেই সমাবেশকে বোঝায় যা কোনো লক্ষ্য অর্জনে তাদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সচেতনতা ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে। সামাজিক দল হলো এমন কিছু ব্যক্তির সমষ্টি যাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এবং যারা প্রত্যেকে দল ও তার প্রতীকী রূপ সম্পর্কে সচেতন। অন্য কথায়, সব সামাজিক দলেরই অন্তত একটি কাঠামো সংগঠন এবং সদস্যদের চেতনায় মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকে। সদস্যদের সবার স্বার্থ বা উদ্দেশ্য একইরকম থাকে যা চরিতার্থ করতে তারা পারস্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া করে । যে দলের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা নিবিড় ও মুখোমুখি সম্পর্ক বিদ্যমান তাকে প্রাথমিক দল বলে। যেমন- পরিবার, খেলার সাথীদের দল, পাড়া ইত্যাদি।
গ। উদ্দীপকে বর্ণিত সামাজিক প্রত্যয়টি হচ্ছে সম্প্রদায়। নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে একটি জনগোষ্ঠীর সুসংহত জীবনযাপন সূত্রে সৃষ্টি হয় সম্প্রদায়। যখন কোনো গোষ্ঠীর সদস্যরা এমনভাবে একত্রে বসবাস করে যে তারা কতিপয় বিশেষ স্বার্থের অংশীদার না হয়ে বরং একটি সাধারণ জীবনযাত্রার অংশীদার হয় তখন তাকে সম্প্রদায় হিসেবে অভিহিত করা যায়।
সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর আওতায় ব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে এবং সে যে ভৌগোলিক এলাকার বাসিন্দা ঐ এলাকার জনগোষ্ঠী নামে পরিচিত হন। সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যা অপরিহার্য। জনসংখ্যাকে কেন্দ্র করেই সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সাধারণ স্বার্থ।
সাধারণ কতগুলো স্বার্থকে কেন্দ্র করেই সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে কতিপয় অনুভূতি ও মনোভাবের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রদায়ের মধ্যেই যে কোনো লোক তার সামগ্রিক জীবনযাপনের সুযোগ পান। কতিপয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্প্রদায়ের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।
উদ্দীপকের রূপপুর গ্রামে অনেক পেশাজীবী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় পাশাপাশি বসবাস করে দীর্ঘদিন থেকে। এই সম্প্রদায় গড়ে ওঠে সহজাত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এবং সকলে সমজাতীয় জীবনযাপন করে থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রূপপুর গ্রামে সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। এই সম্প্রদায়ের রয়েছে বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য।
ঘ। উদ্দীপকের প্রত্যয়টি অর্থাৎ সম্প্রদায় ও সমাজের মধ্যকার পার্থক্যগুলো বিশ্লেষণ করা হলো- সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল। পক্ষান্তরে সম্প্রদায় নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ জীবনযাত্রায় অংশীদারী জনগোষ্ঠী।
সমাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকা থাকা অপরিহার্য নয়। সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে বসবাসের নির্দিষ্ট অঞ্চল থাকা জরুরি। সমাজ হলো বিমূর্ত। পক্ষান্তরে সম্প্রদায় অনেক খানি মূর্ত। সমাজের ক্ষেত্রে ‘সম্প্রদায়গত চেতনা অথবা আমরাবোধ’ বিদ্যমান থাকতেও পারে, আবার নাও পারে।
অন্যদিকে, সম্প্রদায়গত চেতনা ছাড়া সম্প্রদায় সম্ভব নয়। সমাজ অপেক্ষাকৃত বড়। পক্ষান্তরে সম্প্রদায় আকারে ছোট। সমাজে অভিন্নতা ও বিভিন্নতা উভয়ই বিদ্যমান। সম্প্রদায়ে বিভিন্নতার চেয়ে অভিন্নতা গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজ হলো সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী ধাপ। সম্প্রদায় হলো সমাজের পরবর্তী ধাপ। সমাজ হলো একটি সামগ্রিক বিষয়। সম্প্রদায় হলো তার অংশ বিশেষ । উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।