সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আপনি কি একাদশ শ্রেণির ছাত্র? সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১। ‘ক’ এমন একটি গ্রামে বাস করে যার অধিকাংশ মানুষ অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, সুখ-দুঃখ ও উন্নতি- অবনতি সবকিছুই কপালের লিখন। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ক. ইবনে খালদুন রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম কী?
খ. গোষ্ঠী সংহতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ গ্রামটি অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত সমাজ বিকাশের কোন স্তরে অবস্থান করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত স্তরে অবস্থানরত সমাজের প্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়? যুক্তিসহ মতামত উপস্থাপন কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ইবনে খালদুন রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম হলো ‘আল- মুকাদ্দিমা’।
খ। ইবনে খালদুন সমাজ-শক্তির অন্তর্গত কারণ হিসেবে গোষ্ঠী সংহতি বা সামাজিক সংহতির কথা উল্লেখ করেছেন। সামাজিক সংহতি সম্পর্কে ইবনে খালদুন বলেছেন, সামাজিক সংহতি এক ধরনের আদর্শভিত্তিক অনুভূতি, যা সবাই একত্রে বসবাস করে অনুভব করে এবং সাধারণ দায়িত্বগুলো ভাগাভাগি করে নেয়।
এমনকি সাধারণ বিপদ-আপদ এবং ভাগ্যের হেরফেরও তারা একই সাথে মোকাবিলা করে। ইবনে খালদুন এ ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, সামাজিক সংহতি সমাজের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ নেতৃত্ব নির্ধারণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এবং রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে তা সবিশেষ ভূমিকা পালন করে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ গ্রামটি অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত সমাজ বিকাশের ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তরে অবস্থান করছে। অগাস্ট কোঁৎ- এর মতে, ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তর হলো মানব সমাজের আদি স্তর। এ স্তরে সমাজের ওপর ধর্মীয় প্রভাব ছিল অনেক বেশি। এ স্তরে মানুষের মনে যুক্তিবাদী ধারণার সৃষ্টি হয়নি। এ ধর্মতত্ত্বনির্ভর যুগে মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে অবিরাম সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।
তখন মানুষের নৈতিক জ্ঞান ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের। মানবতাবোধ ছিল আক্রমণাত্মক ও পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। এরূপ মনোভাবাপন্ন লোকেরাই এ যুগের সম্মানিত শ্রেণিতে অধিষ্ঠিত ছিল। একারণে অগাস্ট কোঁৎ এ স্তরকে সামাজিক স্তর বলে অভিহিত করেছেন। এ যুগের মানুষ ছিল অদৃষ্টবাদী। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, ‘ক’ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, সুখ-দুখ, উন্নতি- অবনতি সবকিছুই কপালের লিখন। ‘
ক’ গ্রামের মানুষের ধারণা ও বিশ্বাসের সাথে অগাস্ট কোঁৎ- এর ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তরের সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তরের মানুষও অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করত। তারা তাদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল ভাগ্যের লিখন হিসেবে মানত। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ‘ক’ গ্রামটি অগাস্ট কোঁৎ- এর ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তরে অবস্থান করছে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ঘ। উদ্দীপক দ্বারা অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত এয়স্তরের অন্তর্গত ধর্মতত্ত্ব সন্বন্ধীয় স্তরকে বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতিগত কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ স্তরে অবস্থানরত সমাজের প্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ধর্মতত্ত্ব স্তরে মানুষের জ্ঞান ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। তখন মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় ও ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।
তখন মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায় ছিল। এছাড়া ধর্মতত্ত্ব স্তরের মানুষ অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করত। তাদের মধ্যে কোনো যুক্তিবাদী চিন্তা বিকশিত হয়নি। এর ফলে সমাজের প্রগতিও সম্ভব হয়নি। কারণ মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড, ভালো-মন্দ সবকিছুকেই ভাগ্যের লিখন মনে করে বসে থাকত। সমাজের প্রগতির জন্য তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর ফলে সামাজিক প্রগতি বাধাগ্রস্ত হতো। ধর্ম ছিল এ স্তরের মূল চালিকা শক্তি। তাই যেকোনো কাজে মানুষ ধর্মীয় অনূভূতির ওপর বেশি গুরুত্ব দিত।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো কাজ তারা করত না। এছাড়া সমাজের এ স্তরে মানবতা ছিল আক্রমণাত্মক ও পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন । এ ধরনের মানসিকতাও সমাজের প্রগতির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। অদৃষ্টবাদী হওয়ার কারণে এ স্তরের মানুষেরা সামাজিক অনুন্নয়নকে ভাগ্যের লিখন বলে মনে করত। এর ফলেও সামাজিক প্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরোহিত শ্রেণির প্রাধান্য থাকে।
সমাজের সাধারণ মানুষের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-ভাবনার কোনো মূল্যায়ন করা হতো না। পুরোহিতের নির্দেশই ছিল শেষ কথা। এর ফলেও সামাজিক প্রগতি সংঘটিত হতে পারে না। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মানুষের সীমিত জ্ঞান, অদৃষ্টের প্রতি বিশ্বাস, যুক্তিবাদী চিন্তা-ভাবনার অভাব, ধর্মের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস প্রভৃতি কারণে ধর্মতত্ত্ব স্তরে সমাজের প্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
প্রশ্ন ২। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তিতে পর্দার অন্তরালের মহানায়ক তিনি। তার সমাজ সম্পৰ্কীয় মতবাদকে স্থির করে রেখেছেন তার অনবদ্য সৃষ্টি “আল-মুকাদ্দিমায়।” তার আল-উমরান বা সংস্কৃতি বিজ্ঞান এবং আল-আসাবিয়া বা গোত্র সংহতি প্রত্যয়দ্বয় সরাসরি সমাজবিজ্ঞানকে প্রতিনিধিত্ব করে। অপরদিকে ‘বাদওয়া ও হারদা’ ধারণা দুটি থেকেই পরবর্তীতে গ্রাম ও শহর সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। দুঃখের বিষয় হলো তার যোগ্য উত্তরসূরী না থাকায় সমাজবিজ্ঞানের জন্ম হয় তারও ৫ শত বছর পর। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ক. কত সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. অগাস্ট কোঁতের মানব জ্ঞানের “ত্রয়স্তর” বলতে কী বোঝো?
গ. পাঠ্যবইয়ের আলোকে উদ্দীপকে উল্লেখিত মনীষীর সমাজবিজ্ঞানে অবদান ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ হলেও এর উৎপত্তি উৎস ছিল উদ্দীপকে বর্ণিত মনীষীর চিন্তা-চেতনায়” মন্তব্যটি তোমার বিবেচনায় বিশ্লেষণ করো।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ১৮৫৭ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ। মানব জ্ঞানের ক্রমোন্নতি এবং সমাজের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ যে তত্ত্ব প্রদান করেন, তা ত্রয়স্তর সূত্র নামে পরিচিত। অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, মানুষের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণাসমূহ, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং পৃথিবীর সব সমাজ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে তিনটি স্তর অতিক্রম করে এসেছে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
কোঁৎ-এর সমাজবিকাশের এই তিনটি স্তরই ‘ত্রয়স্তর’ নামে পরিচিত। এয় স্তরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে— মানুষের মৌলিক ধারণা ধর্মীয় যুগের স্তর, অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর ও দৃষ্টবাদ এ তিনটি বিবর্তনিক পর্যায় অতিক্রান্ত করেছে। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রথমে ধর্মীয় বা Theological ধারণা থেকে উৎপন্ন হয়ে Metaphysical বা অধিবিদ্যা গত হয়ে Positivism বা দৃষ্টবাদে আসে।
গ। উদ্দীপকে মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের কথা বলা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। মুসলিম ঐতিহাসিক, সমাজ দার্শনিক ইবনে খালদুনের জন্ম তিউনিসে। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে তাকে পথিকৃৎ দার্শনিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মানুষের সমাজ, তার সভ্যতা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অর্জিত উন্নতিকে এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে ‘Al-Umran’ ধারণাটি ব্যবহার করেন। ‘Umaranayat’ শব্দের অর্থ ‘সংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনা’, যা পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীরা ‘সমাজবিজ্ঞান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ইবনে খালদুন রচিত বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ ‘কিতাব-আল-ইবার’ এর ভূমিকা ‘আল মুকাদ্দিমা’তে সমাজ, সভ্যতা ও ইতিহাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তিনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও যুক্তির আলোকে ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন যা পরে এক ধরনের সামাজিক দর্শনে পরিণত হয়। সমাজ সম্পর্কে ইবনে খালদুনের এসব চিন্তাধারা পরবর্তীকালে পৃথক শাস্ত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল । (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
উদ্দীপকে যে মনীষীর কথা বলা হয়েছে তার অনবদ্য সৃষ্টি আল- মুকাদ্দিমা। এছাড়া তার আল-উমরান বা সংস্কৃতি বিজ্ঞান এবং আল আসাবিয়া বা গোত্র সংহতি প্রত্যয়দ্বয় সরাসরি সমাজবিজ্ঞানকে প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা, এর ওপর ভিত্তি করেই সমাজবিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিল। উপরের আলোচনা থেকে তাই স্পষ্ট করে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে তথা সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় ইবনে খালদুন এক অনন্য নাম।
ঘ। সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ হলেও এর উৎপত্তির উৎস ছিল উদ্দীপকে বর্ণিত মনীষী অর্থাৎ ইবনে খালদুনের চিন্তা চেতনায়। ইবনে খালদুন বিশ্বের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে ‘কিতাবুল ইবার’ নামে যে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন তার ভূমিকা ‘আল-মুকাদ্দিমা’ নামে পরিচিত। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
এ গ্রন্থটিতে তিনি তার সমসাময়িককালের ইতিহাসবেত্তাদের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শুধু রাজনৈতিক ঘটনার নিছক বর্ণনা ইতিহাসের বিষয়বস্তু হতে পারে না। তাই তিনি রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। আর এজন্য ইবনে খালদুন একটি নতুন বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন।
এ নতুন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি হবে সুনির্দিষ্ট, যা সত্যিকারের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনায় সাহায্য করবে। ইবনে খালদুন তার এ নতুন বিজ্ঞানের নাম দেন ‘আল-উমরান’ বা সংস্কৃতির বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞান সমস্ত মানব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করবে। ইবনে খালদুন প্রদত্ত আল-উমরানকে সমাজবিজ্ঞান বলা যেতে পারে। কারণ মানবসমাজই এ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
এছাড়া ‘আল আসাবিয়া’ ইবনে খালদুনের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার কেন্দ্রীয় প্রত্যয়। ‘আসাবিয়া’ প্রত্যয়টির অর্থ হলো সামাজিক সংহতি বা গোত্র সংহতি। ইবনে খালদুনের মতে, সমাজের ভিত্তি হচ্ছে গোত্র সংহতি। সমাজ সম্পর্কে ইবনে খালদুনের এসব চিন্তাধারা পরবর্তীকালে পৃথক শাস্ত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এ কারণেই মহান এই মুসলিম মনীষীকে সমাজবিজ্ঞানের ‘আদি জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরিশেষে উপরের আলোনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ হলেও এর উৎপত্তির উৎস ছিল ইবনে খালদুনের চিন্তা চেতনার।
প্রশ্ন ৩। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আয়মান সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি অধ্যয়ন করতে গিয়ে মধ্যযুগের তিউনিসে জন্মগ্রহণ করা একজন মুসলিম দার্শনিক এর তত্ত্বে আকৃষ্ট হয় পরবর্তীতে জার্মান বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে খ্যাত একজন জার্মান দার্শনিকের সমাজ পরিবর্তনের তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে পারে এবং শ্রেণিহীন সমাজ ও শ্রেণি মুক্তির পাঠ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ক. কার্ল মার্কস কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. মধ্যযুগের তিউনিসে জন্মগ্রহণ করা কোন মুসলিম দার্শনিক ‘আল-মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থটি রচনা করেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত তিউনিসে জন্মগ্রহণ করা মুসলিম দার্শনিকের ‘আল-আসাবিয়া’ তত্ত্বটির ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে খ্যাত জার্মান দার্শনিকের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক। কার্ল মার্কস জার্মানির প্রুশিয়ার টিয়ার শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
খ। মধ্যযুগের তিউনিসে জন্ম গ্রহণ করা মুসলিম দার্শনিক এর নাম ইবনে খালদুন। ‘আল-মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থটি তারই অবদান। ইবনে খালদুন এর রচিত বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থের নাম কিতাব- আল-ইবার যা সাতটি খণ্ডে সমাপ্ত হয়েছে। কিতাব-আল-ইবারের প্রথম খণ্ডের নাম ‘মুকাদ্দিমা’। মুকাদ্দিমাতে আছে আল-উমরান অর্থাৎ সংস্কৃতিবিজ্ঞান। আল-উমরান অর্থাৎ মুকাদ্দিমার প্রথম অংশটি ইতিহাসের দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত। তবে কিতাব-আল-ইবার এর মুকাদ্দিমা গ্রন্থটি আল-মুকাদ্দিমা হিসেবেই বেশি পরিচিত।
গ। উদ্দীপকে বর্ণিত তিউনিসে জন্ম গ্রহণ করা মুসলিম দার্শনিক হচ্ছে ইবনে খালদুন। রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও আয়ুষ্কাল সম্পর্কে তিনি আল-আসাবিয়া প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা করেন। ইবনে খালদুনের সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘আল- আসাবিয়া’ যাকে বাংলায় গোষ্ঠী সংহতি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
এ গোষ্ঠী সংহতির মূল উৎস হলো রক্ত সম্পর্ক ও পারিবারিক ঐতিহ্য। সেই সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও দীর্ঘদিন একত্রে সংগ্রাম করার অনুভূতিও সংহতির জন্ম দিতে পারে। খালদুনের মতে, এ গোষ্ঠী সংহতি যেমন ধর্মীয় ভিত্তিতে হতে পারে, তেমনি তা ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ভিত্তিতে হওয়াও বিচিত্র নয়। তিনি রাষ্ট্রের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, পতন এবং সার্বভৌমত্বের ব্যাখ্যায় এ গোষ্ঠী সংহতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দাঁড় করিয়েছেন।
ইবনে খালদুনের মতে, উপজাতিদের মধ্যে বেশি গোষ্ঠী সংহতি বিদ্যমান। তাই উপজাতিদের দ্বারা নগর বা শহর পদানত হবার মাধ্যমে সভ্য রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। তার মতানুযায়ী, রাষ্ট্র টিকে থাকার তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রতিটি পর্যায়কে ৪০ বছর ধরে সর্বমোট ১২০ বছর পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করে তিউনিসে জন্মগ্রহনকারী এক মুসলিম মনীষীর তত্ত্বে আকৃষ্ট হন। এর মাধ্যমে মুসলিম সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন এবং তার আসাবিয়া তত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় গোষ্ঠী সংহতি ও রাষ্ট্র বিবর্তনে ইবনে খালদুন এর আসাবিয়া প্রত্যয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজবিজ্ঞানী হচ্ছেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস । মানব সমাজের ইতিহাসে তার শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব এক অনন্যকীর্তি। এর মাধ্যমে তিনি সমাজের একটি বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। মার্কস বলেন, শিল্পবিপ্লবের পর আধুনিক সমাজ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ দুটি শ্রেণি হচ্ছে বুর্জোয়া বা পুঁজিপতি শ্রেণি এবং প্রলেতারিয়েত বা শ্রমজীবী শ্রেণি।
মার্কসের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিটি শ্রেণি নিজেদের ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা না করে বরঙ নিজ নিজ শ্রেণির সদস্য হিসেবে চিন্তা করবে। এই সংগ্রামে পুঁজিপতিদের সংগ্রাম ক্রমশ হ্রাস পাবে এবং প্রলেতারিয়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। শ্রেণিদ্বয়ের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে এবং পরিমেষে প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিপতি শ্রেণির ধ্বংস আসন্ন হবে। প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
তখন মানুষর সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনেও পরিবর্তন দেখা দেবে। তবে প্রলেতারিয়েতেদের একনায়কত্ব কায়েমই মার্কসের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সমগ্র সম্প্রদায়ের হাতে উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা ন্যাস্ত করে সমাজ থেকে শ্রেণিবিভেদ উচ্ছেদ করা। মার্কসের শ্রেণিতত্ত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শ্রেণিসচেতনতা। অতীতের সমাজগুলোতে শ্রেণিবৈষম্য থাকলেও তীব্রভাবে শ্রেণিসচেতনতা ছিল না।
কিন্তু আধুনিক যে শ্রেণিবিভাগ তাতে প্রতিটি মানুষ শ্রেণি সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে সচেতন থাকে। উদ্দীপকের শিক্ষার্থী জার্মান দার্শনিকের সমাজ পরিবর্তনের তত্ত্বে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং শ্রেণিহীন সমাজ ও শ্রেণি মুক্তির পাঠ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এখানে জার্মান দার্শনিক দ্বারা কার্ল মার্কস এবং তত্ত্ব দ্বারা মার্কসের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। (সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব কার্ল মার্কসের এক অনবদ্য সৃষ্টি। এটি যুগে যুগে সমাজবিজ্ঞানীদের সমাজ বিশ্লেষণের খোরাক জোগাবে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।