Breaking News

যাঁরা মেয়েকে নিয়ে কটুকথা বলতেন, তাঁদের কেউ কেউ ক্ষমা চাচ্ছেন

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলের সদস্য কুষ্টিয়ার মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন নিলা। কুষ্টিয়া পৌরসভার বর্ধিত জুগিয়া সবজি ফার্মপাড়ায় নিলুফার বাড়ি। শহরের ভেতর হলেও ওই এলাকায় গ্রামীণ পরিবেশ। প্রধান সড়কের পাশে মোটরসাইকেল রেখে হেঁটে আজ মঙ্গলবার সকালে পৌঁছাতে হলো নিলুফার বাড়িতে।

নিলুফার বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল আধা পাকা টিনশেড ঘর। নিলুফার মা বাছিরন আক্তার আর ছোট বোন সুরভী আক্তার ওই বাড়িতে থাকেন। ফুল–ফলের ছোট ছোট গাছগাছালিতে ঘেরা উঠান। ঘরে বসেই কথা হয় নিলফুার মা-বোনের সঙ্গে। আলাপের ফাঁকে চোখ পড়ল ঘরের ভেতর ছোট্ট একটা আলমারির দিকে। সেখানে থরে থরে সাজানো মেডেল ও ক্রেস্ট। আলমারির ওপর একটি ফুটবল রাখা। নিচে রাখা বাইসাইকেল। বাড়িতে এলে বাইসাইকেল চালান নিলুফা।

অভাবে–কষ্টে মানুষ করিচি। ও (নিলুফা) যদি কোনো দিক (ফুটবল) ভালো করতে পারে করুক। বাধা দেব না। মানুষ যত খারাপ বলে বলুক, শেষ দেখে ছাড়ব।

বাছিরন আক্তার, সাফজয়ী নিলুফার মা

দুই মেয়েই বাছিরনের সম্বল। বাছিরনের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তবে বিয়ের কয়েক বছর পরই বাছিরনের রিকশাচালক স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। মা–বাবার বিচ্ছেদের সময় নিলুফার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র দেড় মাস। ওই সময় যেন অথই সাগরে পড়ে যান বাছিরন। কিন্তু দমে যাননি তিনি। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় কুঠিপাড়ার চরে মায়ের বাড়িতে ওঠেন। তিনি স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নেন। সামান্য বেতনে চলতে থাকে সংসার।

বাছিরন আক্তার বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে খেলাধুলায় নিয়মিত মুখ ছিলেন নিলুফা। শহরের চাঁদ সুলতানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নিলুফা এসএসসি পাস করেন। দৌড়, লংজাম্পসহ বিভিন্ন খেলায় পুরস্কার নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন। খেলাধুলায় মেয়ের সাফল্য দেখে বাছিরনও খুশি হতেন। তাই কখনো খেলতে যেতে মানা করেননি। যদিও প্রতিবেশীরা টিপ্পনি কেটে বলতেন, ‘মা হয়ে মেয়েকে খেলায় পাঠায়।’ স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সাভারে ফুটবল একাডেমিতেও খেলতেন নিলুফা। ধকল সইতে না পেরে একবার কুষ্টিয়াতে ফিরতে চেয়েছিলেন নিলুফা। কিন্তু মায়ের বারণ। যত কষ্টই হোক না কেন, থাকতে হবে। হাল ছাড়া যাবে না।

আরও দেখুন  যমজ ছেলে জন্ম দিলেও বাবা আলাদা! একইদিনে দুই পুরুষের সঙ্গে মিলনের দাবি মায়ের

বাছিরন বলছিলেন, ‘সংসারে অভাব-অনটন ছিল। অভাবে–কষ্টে মানুষ করিচি। ও (নিলুফা) যদি কোনো দিক (ফুটবল) ভালো করতে পারে করুক। বাধা দেব না। মানুষ যত খারাপ বলে বলুক, শেষ দেখে ছাড়ব।’

এসএসসির পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা সরকারি কলেজে ভর্তি হন নিলুফা। সেখান থেকেই এইচএসসি পাস করেন। এরপর খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিলফুার খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পেছনে থানাপাড়া এলাকার আরেকজনের অবদানের কথা জানালেন বাছিরন। সেই ব্যক্তি হলেন আবু ফাত্তাহ। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। আবু ফাত্তাহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা ছিলেন। কুঠিপাড়া এলাকায় চরে নিলুফার ফুটবল খেলা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ, ঢাকায় ভর্তিসহ যাবতীয় কাজে তিনিই সহযোগিতা করেন।

About Solayman Kabir

Check Also

আদালতের বিশেষ রুমে সে’ক্স’রত অবস্থায় নারী পুলিশের সাথে মেলামেশার সময় আটক ওসি..!!

আদালতে নিজ কক্ষে নারী কনস্টেবলের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *