নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল
প্রশ্ন ১। স্বপ্ন বেতনভুক্ত চাকরিজীবি রহমান সাহেব হিসাব নিকাশ করে সংসার পরিচালনা করেন। ফলে মাস শেষে কিছু টাকা থেকেই যায়। অন্যদিকে তারই সহকর্মী চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে অনেক অর্থ উপার্জন করলেও তার সংসারে অভাব লেগেই থাকে। এ ব্যাপারে সহকর্মী রহমান সাহেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন “গৃহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পনা করা দরকার।” (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
ক. সবচেয়ে সীমিত সম্পদ কোনটি?
খ. কোন ধরনের সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. রহমান সাহেব তার সংসারকে কীভাবে পরিচালনা করেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রহমান সাহেবের উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। সময় সবচেয়ে সীমিত সম্পদ।
খ। বস্তুগত সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য। এ সম্পদ বিনিময় করা যায়। এর বিনিময় মূল্য আছে। এগুলো হস্তান্তরযোগ্য, দুর্লভ ও পরিমাপযোগ্য। অর্থ, জমি, বাড়ি ইত্যাদি বস্তুতগত সম্পদ। এগুলোর মালিকানা হস্তান্তর করা যায়।
গ। রহমান সাহেব বাজেটের মাধ্যমে সংসার পরিচালনা করেন। বাজেট হচ্ছে অর্থ ব্যয়ের পূর্ব পরিকল্পনা। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট আয়ের ব্যয় ও সঞ্চয় করার পূর্বপরিকল্পনা হচ্ছে বাজেট। বাজেটে সম্ভাব্য আয়কে কোন কোন খাতে, কোন কোন সময়ে কী পরিমাণে ব্যয় করা হবে, তার লিখিত বিবরণ থাকে। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
সুপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করলে মূল্যবান অর্থের অপচয় ঘটে না এবং আমাদের সব চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। রহমান সাহেব স্বল্প বেতনভুক্ত চাকরিজীবী। তিনি আয় ব্যয়ের মধ্যে হিসাব নিকাশ করে সংসার পরিচালনা করেন। অর্থাৎ তিনি প্রতিমাসে বাজেট তৈরি করে সংসার পরিচালনা করেন। তার ফলে তার অর্থের অপচয় হয় না। পরিবারের সবার চাহিদা মেটানোর পরও মাস শেষে কিছু টাকা থেকে যায়।
ঘ। ‘গৃহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পনা করা দরকার রহমান সাহেবের এ উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিকল্পনা। পরিকল্পনা করে অর্থ ব্যয় করলে তা চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন বাজেট। রহমান সাহেব প্রতিমাসে বাজেটের মাধ্যমে তার সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু তার সহকর্মী চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে অনেক অর্থ উপার্জন করলেও তার সংসারে অভাব লেগেই থাকে। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
তার এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বাজেট তৈরি করা। বাজেট করার ফলে তিনি পরিবারের আয় ও ব্যয় সম্বন্ধে ধারণা পাবেন। ফলে তার পরিবারের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ হবে। বাজেট তার পরিবারের অপচয় রোধ করে স্বচ্ছলতা আনতে সাহায্য করবে।
তিনি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বাজেটের ফলে তার পরিবারের সদস্যরা মিতব্যয়ী হতে শিখবে। ফলে অপচয় হ্রাস পাবে। পরিশেষে বলা যায়, বাজেট পরিকল্পনার মাধ্যমে গৃহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
প্রশ্ন ২। হালিমা বাজেট তৈরির সময় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কোনো অর্থ সংরক্ষিত রাখেন না। ফলে যে কোনো সদস্যদের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, অনুষ্ঠানের দাওয়াতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ের জন্য প্রায়ই তার বাজেটে সমস্যা হয়। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
ক. বাজেটে আয়ের সাথে কোনটির সমতা রক্ষা করতে হয়?
খ. বাজেটের গুরুত্ব উল্লেখ করো।
গ. হালিমার বাজেটে সমস্যা সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. হালিমার তৈরিকৃত বাজেটটি বাস্তবমুখী না হওয়ার সপক্ষে তোমার মতামত আলোচনা করো।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বাজেটে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমতা রক্ষা করতে হয়।
খ। বাজেট সীমিত অর্থে আমাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। বাজেট পরিবারের আয় ও ব্যয় সম্বন্ধে ধারণা দেয়। বাজেট পরিবারের অপচয় রোধ করে সচ্ছলতা আনয়নে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণ করা যায়। বাজেট ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে। এটি পরিবারের সদস্যদের মিতব্যয়ী হতে সাহায্য করে। বাজেট করে অর্থ ব্যয় করলে সময় ও শক্তির সাশ্রয় হয়। বাজেট পরিবারে সদস্যদের সকল চাহিদা পূরণ করে তাদের সন্তুষ্টি দিতে পারে। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
গ। হালিমার বাজেটে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণ হলো তিনি চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচের খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখেন না। বাজেট হলো অর্থ ব্যয়ের পূর্ব পরিকল্পনা। বাজেটে সম্ভাব্য আয়কে কোন কোন খাতে, কোন কোন সময়ে কী পরিমাণে ব্যয় করা হবে তার লিখিত বিবরণ থাকে। বাজেট তৈরির সময় কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে সেগুলো স্থির করে নিতে হয়। গুরুত্ব অনুযায়ী খাতগুলো সাজাতে হয়।
হালিমার পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হলে এবং সেজন্য অর্থ ব্যয় হলে তা অন্য খাতে ঘাটতির সৃষ্টি করে। হালিমা বাজেটের খাতগুলো সঠিকভাবে সাজালে তার বাজেটে সমস্যা হতো না। বাজেটে খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসা, সদস্যদের ব্যক্তিগত কার্যাবলি, সঞ্জয় এবং অন্যান্য খরচ খাত রাখতে হয়। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
তাই চিকিৎসা খাতে হালিমা যদি অর্থ বরাদ্দ না রাখেন তাহলে তাঁর অর্থ সংকটে পড়া খুব স্বাভাবিক। এ কারণে বাজেটে চিকিৎসা খাতটি রাখতে হবে। সুতরাং যথাযথভাবে বাজেটের খাত স্থির না করে বাজেট করার ফলে হালিমার বাজেটে সমস্যা হয়।
ঘ। হালিমার তৈরিকৃত বাজেটটি মোটেই বাস্তবমুখী নয়। কারণ একটি বাস্তবমুখী বাজেট তৈরি করার সময় জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু হালিমা সেদিকে লক্ষ রাখেন না। ফলে প্রায়ই তাকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। বাজেট পরিবারের অপচয় রোধ করে সচ্ছলতা আনে।
বাজেট তৈরির সময় মাসের সম্ভাব্য মোট আয় নির্ধারণ করে নিতে হয়। আয়ের হিসাব করার সময় পরিবারের সব রকম উৎসের দিকে নজর দিতে হয়। প্রকৃত বাজেট প্রস্তুত করার সময় কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে সেগুলো স্থির করতে হয়। তারপর খাতগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী সাজাতে হয়। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
সাধারণত সর্বনিম্ন বরাদ্দ দেওয়া হয় সঞ্চয়, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে। এছাড়াও জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য কিছু বাড়তি অর্থ সব সময় হাতে রাখতে হয়। সুতরাং, এসব বিষয় বিবেচনা করেন না বলেই হালিমার বাজেট বাস্তবমুখী হয় না।
প্রশ্ন ৩। ববি প্রতি মাসে আয়ের পরিমাণ অনুযায়ী বাজেট তৈরি করেন। কোনো খাতে হঠাৎ ব্যয় বেশি হয়ে গেলে অন্য খাতে ব্যয় সাশ্রয় করে সমতা আনেন। তিনি বলেন, ‘বাজেট অনুযায়ী খরচ করা হলে তা সদস্যদের চাহিদা পূরণ করে তাদের সন্তুষ্টি দেয়।’ (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
ক. কোন সম্পদটি কখনো থেমে থাকে না?
খ. সময়ের সাথে ব্যক্তিগত সফলতার সম্পর্ক কীরূপ?
গ. ববি কীভাবে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ববির উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ করো।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। সময় কখনো থেমে থাকে না।
খ। যে যত বেশি অর্থবহ কর্মসূচী দিয়ে নিজেকে সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারবে সে তত সফল হবে। সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করে মানুষ ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। অর্থাৎ সময়ের সদ্ব্যবহার ও ব্যক্তিগত সফলতা একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গ। ববি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করেন। বাজেট অর্থ ব্যয়ের একটি চমৎকার কৌশল। আয় অনুযায়ী সুপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করলে মূল্যবান অর্থের অপচয় হয় না। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
ববি পরিবারের মোট আর্থিক আয় নির্ধারণ করেন। তিনি ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন এবং কোন খাতে কত ব্যয় করা হবে তার লিখিত বিবরণ রাখেন। দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করার আগে তিনি প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারদর জেনে মূল্য একত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন।
ববি মোট আয় জানার পর সম্ভাব্য ব্যয়ের টাকার পরিমাণের সাথে হিসাব করে দেখেন আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা আছে কিনা। হঠাৎ কোনো খাতে ব্যয় বেশি হলে অন্য খাতে ব্যয় কমিয়ে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করেন। এভাবেই তিনি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করেন।
ঘ। ববি বলেন বাজেট অনুযায়ী খরচ করা হলে তা সদস্যদের চাহিদা পূরণ করে তাদের সন্তুষ্টি দেয়। তার উক্তিটি যথার্থ। মানবজীবনে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
গৃহ ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ ব্যবস্থাপনা করা জরুরি। এজন্য অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন করা জরুরি। বাজেট তৈরির সময় কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে তা স্থির করে গুরুত্ব অনুযায়ী খাতগুলো সাজিয়ে নিতে হয়। প্রত্যেকটি খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
বাজেট তৈরি করা থাকলে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলোর প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে সঞ্চয়ের খাত নির্দিষ্ট থাকায় প্রতি মাসে কিছু না কিছু সঞ্চয় করা সম্ভব হয়। বাজেটে প্রত্যেকটি বিষয়ে নির্দিষ্ট খাত থাকায় সদস্যদের কোনো চাহিদাই অপূরণীয় থাকে না। তাই ববির উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি । (নবম-দশম গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়)
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল ধরণের আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।